পদত্যাগের হিড়িক দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরপ্রধানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কলেজের অধ্যক্ষ, স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা পদত্যাগ করে আসছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা এভাবে পদত্যাগ করছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নানাভাবে বাধা দিয়েছেন। এ কারণে প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা ঐ সব পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।
দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ পদত্যাগ করেছেন। গতকাল রবিবার সকালে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছেন। কাজী শহীদুল্লাহ অসুস্থতার কারণে চেয়ারম্যান পদে থেকেই দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করেছেন। কাজী শহীদুল্লাহ ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর প্রথম বারের মতো ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর ইউজিসি চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ফেরদৌস জামানকে সচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। গতকাল রবিবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে তারা পদত্যাগপত্রে সই করেন। পদত্যাগ করা দুই জন হলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী এবং কলেজ শাখার অধ্যাপক ও গভর্নিং বডির (কলেজ) সদস্য ফারহানা খানম। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন পদত্যাগ করেছেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গতকাল রবিবার তিনি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্রটি পাঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহসিন কবির পদত্যাগ করেছেন। গতকাল দুপুরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগপত্রে সই করে কলেজ ছাড়েন তিনি।
পদত্যাগ করেছেন জবি উপাচার্য সাদেকা হালিমসহ রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও হল প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। একইসাথে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ পুরো প্রক্টোরিয়াল বডি , (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আইনুল ইসলাম , জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক তানভীর আহসান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রানী সরকার।
খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. মিহির রঞ্জন হালদার ও প্রো- ভিসি প্রফেসর ড. সোবহান মিয়ার পদত্যাগের দাবিতে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষকরা আল্টিমেটাম দিয়েছে। গতকাল রবিবার ক্যাম্পাসে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকবৃন্দের ব্যানারে প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে এ আল্টিমেটাম ঘোষণা করে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ জামাল উদ্দিন ভূঞার পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মানববন্ধন থেকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পদত্যাগ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মশিউর রহমানও। গতকাল বিকেলে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মাহি বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
What's Your Reaction?












