ছাত্র আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নেপথ্যে জিয়াউল আহসান
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যতবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছিল তা জিয়াউল আহসানের নির্দেশে বন্ধ করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার সময় গত ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায় জিয়াউল আহসানের নির্দেশে। টানা পাঁচদিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা বন্ধ ছিল ১৩ দিন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ২০২২ সাল থেকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এনটিএমসির দায়িত্বে থাকাকালীন একের পর এক কল রেকর্ড ফাঁস করেন তিনি। রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য হুমকি এমন সব ব্যক্তির স্পর্শকাতর কল রেকর্ড তার নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেওয়া হতো। তিনি এমটিএমসি’র দায়িত্বে থাকাকালীন সরকারের এই সংস্থাটির আড়িপাতার সক্ষমতা বাড়ানো হয়। এই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তার নির্দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মোবাইল ফোনে আড়িপাতা হতো। এরপর ওইসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কল রেকর্ড সংগ্রহ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হতো। এসব কল রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে অনেক সুশীল সমাজের লোকজনকে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হতো।
জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অসংখ্য ব্যক্তিকে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। মূলত ব্যাপক পরিসরে গুমের ঘটনা শুরু হয় তার হাত ধরে। সেটি শুরু হয়েছিল ১/১১-এর পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী, বিরোধী ঘরানার রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সরকারবিরোধী সমালোচকসহ অসংখ্য ব্যক্তি গুমের শিকার হন। তখন দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন ব্যক্তি গুম হয়েছেন বলে খবর ছাপা হতো। ভুক্তভোগীর পরিবারগুলো থানা থেকে শুরু করে ডিবি, র্যাব কার্যালয়ে ধরনা দিয়ে নিখোঁজ স্বজনের খোঁজ পেত না। অভিযোগ রয়েছে এসবের নেপথ্যে ছিলেন জিয়াউল আহসান।
সূত্রগুলো বলছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে যে কয়টি গুম খুনের ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জিয়াউল আহসানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী থেকে শুরু করে চৌধুরী আলম, সাজেদুল ইসলাম সুমন, আদনান চৌধুরী, কাওসার আহমেদ, ইফতেখার আহমেদ দিনার, জুনায়েদসহ আরও অসংখ্য বিএনপিপন্থি ও সরকারবিরোধী আলোচনা-সমালোচনার সঙ্গে যুক্তদের গুম হতে হয়েছে। তাদের হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। তবে বছরের পর বছর ধরে এত অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে ছিলেন জিয়াউল আহসান। আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়াতে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না। আওয়ামী লীগ সরকার যেমন তার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে ঠিক তেমনি তিনিও দাপটের সঙ্গে চাকরি করছিলেন।
What's Your Reaction?












