মার খেলেন কে? হিরো আলম নাকি এমপি প্রার্থী
যাঁরা ঘুষি মারছিলেন, লাথি ছুড়ছিলেন, ধুপধাপ পেটাচ্ছিলেন, তাঁরা সম্ভবত ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আশরাফুল আলমকে মারছিলেন না; তাঁরা মারছিলেন হিরো আলমকে।
আশরাফুল আলম কে—সেটি পরে জানলেও চলবে। আগে জানি, হিরো আলম কে? কে এই হিরো আলম?
উত্তরটা কমবেশি সবার জানা। তবু মনে করিয়ে দিই—হিরো আলম হলেন সেই ব্যক্তি যিনি বই হাতে ইশকুলে যাওয়ার বয়সে পেটের পীড়নে বাদাম চানাচুর বেচতেন; তারপর ক্যাবল টিভির (ডিশ লাইন) কানেকশন দেওয়ার কাজ করতেন; তারপর অনেক কষ্টে সেই ব্যবসার মালিকানা কিনে নেন; তারপর কালো হাড় বের করা লিকলিকে ‘না খাওয়া’ শরীর নিয়ে বাংলা সিনেমার গানে ঠোঁট মিলিয়ে মিউজিক ভিডিও বানিয়ে সেই ভিডিও ডিশ লাইনে ‘ছাড়তেন’; তারপর ফেসবুক-ইউটিউব জমানায় তাঁর ভিডিও ভাইরাল হওয়া শুরু করে; তারপর তিনি নিজের প্রযোজনায় নিজেই হিরো হয়ে অভিনয় করা শুরু করেন।
কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনে নিজেদের নামের শেষে ‘স্যার’ লাগিয়ে ‘মিজান স্যার’, ‘হিরু স্যার’, ‘লিটু স্যার’ যেভাবে একেকজন ‘স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু’ হয়ে বসে আছেন, প্রায় সেই কায়দায় আলম তাঁর নামের আগে ‘হিরো’ জুড়ে দিয়েছিলেন। সেই ‘হিরো’ আঠার মতো ‘আলম’-এর সঙ্গে জোড়া লেগে ‘হিরো আলম’ হয়ে গেছে।
যদ্দুর জানি, একমাত্র ছবি আঁকা ছাড়া নাচ, গান, অভিনয়, কবিতা লেখা, কবিতা আবৃত্তি করা, আত্মজীবনী লেখাসহ শিল্পের হেন কোনো সেক্টর নেই সেখানে হিরো আলম ‘পা’ দেননি। আমাদের প্রথাগত আর্ট স্কুলিংয়ের সংজ্ঞায় সেগুলোকে নাচ, গান, অভিনয় বলা যাবে কিনা তা নিয়ে ‘হেফাজতে আর্ট-কালচার’ মহলে নানা তর্ক আছে। কিন্তু যেটি তর্কাতীত, সেটি হলো হিরো আলম একটি ‘ভাইরাল ক্যারেক্টার’। তাঁর সমস্ত কনটেন্টের ‘লাইক’, ‘শেয়ার’, ‘ভিউ’ অনেক।
এই ‘ভিউ’ তাঁকে জনপ্রিয়তা (এটি ‘জনপ্রিয়তা’ নাকি ‘জন পরিচিতি’ সেটিও তর্কসাপেক্ষ) দিয়েছে। শিল্পবোদ্ধা জগতে তাঁর ভিডিও কনটেন্টগুলোকে ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ ও সামাজিক অবক্ষয়ের বড় নিদর্শন বলেও বলা হয়ে থাকে।
What's Your Reaction?