আজ মুসলমানদের বরকতময় রজনী শবে বরাত

১৪৪৫ হিজরী বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিকে মুসলমানরা শবে বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। তাই, এ রাতটি 'লাইলাতুল বরাত' হিসেবেও পরিচিত। মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মগ্ন থাকেন।

Feb 24, 2024 - 23:45
 0  4
আজ মুসলমানদের বরকতময় রজনী শবে বরাত

আজ রোববার দিবাগত রাতে সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে।

মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল বরাত আজ। রোববার (২৫ ফেব্রুযারি) দিবাগত রাতে সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা শবে বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। এ রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ হিসেবেও পরিচিত।

শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। অতএব ‘শবে বরাত’ অর্থ মুক্তির রজনি। ‘শবে বরাত’-এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাত’, যা কুরআনুল কারিমে বিদ্যমান। হাদিসের ভাষায় যাকে ‘লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য রজনি বলা হয়। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে এ রাত ‘শবে বরাত’ নামেই বেশি পরিচিত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনুল করিমের সুরা দুখানে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হা-মিম। শপথ উজ্জ্বল কিতাবের। নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।’

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বরেণ্য মুফাসসির আল্লামা শেখ আহমদ সাভী, আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) বর্ণনা করেন, বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত ইকরামা (রা.) এবং অন্যান্য তাফসিরকারকদের মতে, ‘আর বরকতময় রাত হলো লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত।’ ইমাম আবু জাফর তাবারি (রহ.) বলেন, প্রখ্যাত তাবেয়ি হজরত ইকরামা (রা.) বলেন, মধ্য শাবানের রাতে বছরের সব ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজিদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে পরবর্তীতে একজনও কমবেশি হয় না। ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, ‘এ রাতের ৪টি নাম আছে-লাইলাতুম মুবারাকা, লাইলাতুল বারাআত, লাইলাতুস সাক, লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান।’ ইমাম বাগাভি (রহ.) লিখেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সব বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে কদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন’ (তাফসিরে বাগাভি : ৭/২২৮; তাফসিরে জালালাইন : পৃ. ৪১০; তাফসিরে কুরতুবী : ১৬/১২৬)

জামে তিরমিজির বর্ণিত হাদিসে আরও রয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। প্রিয় নবী (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালব গোত্রের ভেড়া-বকরির পশমের সংখ্যার পরিমাণের চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। একদিন প্রিয় নবী (সা.) আম্মাজান আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে তুমি কী জানো? তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা কী? আল্লাহর রাসুল (সা.) উত্তরে বললেন, আগামী ১ বছরে কতজন আদম সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে এবং কতজন আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে তা এ রাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে তাদের আমল মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের রিজিক অবতীর্ণ কিংবা নির্ধারণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে মাজা (রহ.) বলেন, হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তায়ালা রহমত নিয়ে আবির্ভূত হন এবং তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘চৌদ্দ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা সে রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে রহমত নিয়ে অবতরণ করেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কী? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছো কী? আমি রিজিক দেব; আছ কী কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। তবে মুশরিক, হিংসা পোষণকারী, সর্বদা ব্যভিচারকারী, পিতামাতার অবাধ্য, মদপানকারী, হারাম মাল ভক্ষণকারী, এতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারী ক্ষমা পাবে না।’ উক্ত অপরাধীদের উচিত মহিমান্বিত রজনির আশার পূর্বে মহান প্রভুর কাছে বিশুদ্ধ অন্তরে তওবা করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাওয়া।

পবিত্র এই রাতে তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত পরম করুণাময় আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ পড়া, কেরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা; কুরআন তেলাওয়াত করা; দরুদ শরিফ বেশি পাঠ করা, ইস্তেগফার অধিক পরিমাণে করা; ফজিলতপূর্ণ বিভিন্ন দোয়া, তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আজকার ইত্যাদি করা। সম্ভব হলে কবর জিয়ারত করা, নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সব মুমিন-মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পরদিন নফল রোজা রাখা। এ রাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সম্ভব হলে দুস্থ-অভাবগ্রস্তদের মাঝে নানা রকমের খাদ্য বিতরণ করে শ্রেষ্ঠতম আমলকারীর তালিকায় নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করে মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি কামনা করা।

সম্মানিত অভিভাবকদের উচিত আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে খামাখা ঘোরাঘুরি করা, অযাচিত আনন্দ-উল্লাস করা, বেহুদা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা, অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোর মতো জঘন্য অপরাধ থেকে আপন সন্তানদের বিরত রেখে সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow